ঢাকাসোমবার , ২৩ আগস্ট ২০২১
  1. অপরাধ
  2. অর্থনৈতিক
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্টগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. জেলা/উপজেলা
  12. জোকস
  13. ঢাকা
  14. তথ্য প্রযুক্তি
  15. ধর্ম

কথিত বন্দুকযুদ্ধেই শেষ ছেনুয়ারার সাজানো সংসার

একুশে বার্তা
আগস্ট ২৩, ২০২১ ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুই সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের আব্দুল জলিল ও ছেনুয়ারা বেগম দম্পতির সাজানো সংসার ভালোই চলছিল। আব্দুল জলিল ছিলেন সিএনজি অটোরিকশাচালক। একটু বাড়তি সুখের আশায় স্বামীকে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেন ছেনুয়ারা। ঋণ নিয়ে এবং জমি বিক্রি করে টাকাও জোগাড় করেন। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে যায় আব্দুল জলিলের।বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে যান আব্দুল জলিল। এরপর থেকে নিখোঁজ হন তিনি। সাত মাস পর হাসপাতালের মর্গে মেলে তার লাশ। এই সাত মাসে ছেনুয়ারার সঙ্গে ঘটে যায় নানা হয়রানিমূলক ঘটনা, যা তার জীবনে বয়ে আনে অন্ধকার।
কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপসহ ১১ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত আব্দুল জলিলের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম (২৪)। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেন।মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ ছাড়াও আসামি করা হয় টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ উপপরিদর্শক মশিউর রহমান, উপপরিদর্শক সুজিত চন্দ্র দে, সহকারী উপপরিদর্শক মো. আরিফুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন পরিদর্শক নিরস্ত্র মানস বড়ুয়া, উপপরিদর্শক অরুণ কুমার চাকমা, নাজিম উদ্দিন ভুইয়াঁ, রামধন চন্দ্র দাশ, কনস্টেবল সাগর দেব ও রুবেল শর্মাকে।মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভিসা প্রসেসিং করতে চট্টগ্রাম যান কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালীর পশ্চিম মহেশখালীয়া পাড়ার সিএনজি অটোরিকশাচালক আব্দুল জলিল। ৩ ডিসেম্বর সকাল নয়টার দিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিজ জেলা কক্সবাজারের ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে আসেন জলিল। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে জলিল ও তার সঙ্গে থাকা প্রতিবেশী রফিক উল্লাহকে আটক করে ডিবির পরিদর্শক মানস বড়ুয়া (মামলার ৫ নং আসামি) নেতৃত্বাধীন পুলিশের একটি দল।১২ দিন পর কক্সবাজার সদর থানার একটি মামলায় আসামি দেখিয়ে জলিলের সঙ্গে থাকা রফিক উল্লাহকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু তখনো খোঁজ মেলেনি আব্দুল জলিলের। খবর পেয়ে স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম টেকনাফ থানায় স্বামীর সন্ধান পেতে জিডি করতে গেলে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ তার জিডি গ্রহণ না করে ‘জলিল হারিয়ে গেছেন’ বলে কক্সবাজার সদর থানায় খবর নিতে বলেন।পরে কক্সবাজার সদর থানায় গেলেও স্বামীর কোনো হদিস পাননি ছেনুয়ারা। আবারও টেকনাফ থানায় জিডি গ্রহণের আবেদন করেন তিনি। কিন্তু জিডি গ্রহণ না করে উল্টো তাকে কুপ্রস্তাব দেন ওসি প্রদীপ। প্রস্তাবে রাজি না হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন গৃহবধূ ছেনুয়ারা।২০২০ সালের ২৩ মার্চ প্রদীপের নেতৃত্বে বাকি আসামিরা ছেনুয়ারার বাড়িতে আসেন। সেখানে স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন প্রদীপ।বসতভিটা জিম্মা রেখে এবং স্বামীর সিএনজি অটোরিকশা বিক্রি করে ছেনোয়ারা প্রদীপের হাতে পাঁচ লাখ টাকা তুলে দেন। তারপরও মুক্তি দেওয়া হয়নি জলিলকে। এর কিছুদিন পর ২০২০ সালের ৬ জুলাই রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয় আব্দুল জলিলকে। পরের দিন ৭ জুলাই সকালে স্বামীর নিথর দেহ হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকার খবর পান স্ত্রী ছেনুয়ারা। মরদেহ দেখে স্বামীকে চেনার উপায় ছিল না জানিয়ে নিহত আব্দুল জলিলের স্ত্রী ছেনুয়ারা বেগম বলেন, বর্তমানে দুই সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। স্বামীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার আশায় বসতভিটাটিও বিক্রি করে দেওয়ায় এখন সেখানেও থাকতে পারছি না। আমার সাজানো সংসার একেবারেই শেষ। আল্লাহ বলতে পারবেন আমার স্বামীর নামে কোনো মামলা না থেকেও কেন এত বড় অন্যায় করা হয়েছে। তবু সুবিচারের আশায় আছি।মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ফয়সাল আহমেদ বলেন, মাঠপর্যায়ের যে তদন্ত, তা শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় দাবি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান বলেন, দেশে এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত। সেখানে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহিরর্ভূত হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণ করা যায় না। যদিও মাদক মামলা বা হত্যা মামলায় বিচারকাজ আরও দ্রুত শেষ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিছু মামলায় যে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয়, সেগুলো কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার পর থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যার অভিযোগ এনে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ শতাধিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পৃথক ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলা তদন্ত করছে পুলিশেরই বিভিন্ন ইউনিট। সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে আছেন সাবেক ওসি প্রদীপ।

প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

x