নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার টেকনাফের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ড্রীম নাইট হোটেলে হামলা ও লুটপাট চালিয়ে দখল করার অভিযোগ উঠেছে। এসময় হোটেলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেধম মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।
এসময় হোটেলে থাকা প্রায় ৩০ জন পর্যটকদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। শ্লীলতাহানি করা হয় মহিলা পর্যটকদের। হাতিয়ে নেয়া হয় পর্যটকদের সব মূল্যবান মালামাল। হামলায় কর্মকর্তা-কর্মচারি, মহিলাসহ ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। গত শনিবার (৩১ অক্টোবর) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এই তান্ডব চালায়।
সুত্রে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে ড্রীম নাইটের মালিক ফেনীর আবু সাঈদ নোমানের সাথে ইকো হলিডেস লিমিটেড ৩ বছরের জন্য চুক্তি করে ভাড়া নেয়। ভাড়া নেয়ার পর থেকে সুনামের সাথে ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে রামগঞ্জ লক্ষীপুরের শামসুল আলম, তার সহযোগী সাইফুল আলম গং টেকনাফ থানায় ড্রীম নাইটের মালিকানা দাবি করে একটি জিডি করেন। জিডি প্রেক্ষিতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি তদন্ত এবিএম এস দোহা ও এসআই সাব্বির হোসেন ইকো হলিডেস কর্তৃপক্ষকে ডাকেন।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ইকো হলিডেস কর্তৃপক্ষ টেকনাফ থানায় যায়। তখন টেকনাফ থানা কর্তৃপক্ষ মূল মালিক আবু সাঈদ নোমানের সাথে যোগাযোগ করে থানায় আসার জন্য বলেন। যার আলোকে ইকো হলিডেস কর্তৃপক্ষক আবু সাঈদ নোমানের সাথে যোগাযোগ করতে গেলে তার স্ত্রী জানান তিনি অনেকদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ওইসময় তার স্ত্রী ধারণা করেন ব্যবসায়ীক মতবিরোধের জের ধরে ওই চক্রই তাকে গুম করে রেখেছেন।
তাকে না পেয়ে পরে থানা কর্তৃপক্ষ শামসুল আলম ও সাইফুল আলম গংয়ের সাথে আমাদের ৩১/১০/২০২০ ইং পর্যন্ত একটি সমঝোতা চুক্তি করে দেয়। সেই সমঝোতার আলোকে সেন্টমার্টিনে ড্রীম নাইট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছিল ইকো হলিডেস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হঠাৎ শামসুল আলম গং অজানা উদ্দেশ্যে গত ৩০ অক্টোবর টেকনাফ থানায় আমাদের বিরুদ্ধে আরেকটি জিডি করেন। বিষয়টি টেকনাফ থানা ইকো হলিডেস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা যাওয়ার জন্য সম্মতি জানায়।
কিন্তু পরদিনই ৩১ অক্টোবর হঠাৎ লক্ষীপুরের রামগঞ্জ চন্ডী পুরের মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র শামসুল আলম ও একই এলাকার আবুল কালামের পুত্র সাইফুল ইসলাম এবং কুমিল্লা দাউদকান্দি বাহের চর বাজরার মৃত বাচ্চু মিয়ার পুত্র মো. আল আমিন ছিদ্দিক আকাশের নেতৃত্বে সন্টমার্টিনে ড্রীম নাইট প্রতিষ্ঠানে ভাড়াটিয়া ৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায়।
হামলায় অংশ নেয় ঢাকা কাঠাল বাগন মসজিদের কথিত ইমাম কফিল উদ্দিন বেপারীর পুত্র মাওলানা আবদুল জব্বার, মারুফ, নোয়াখালী সোনাইমুড়ির কারিহাটের কোমার খরিয়ার মৃত সুলতান মাহমুদের পুত্র আজিজুর রহমান হেলাল, নোয়াখালী কারিরহাটের টাকিয়া বাজারের লামাস প্রাসাদের মৌলভী আবদুল মান্নানের পুত্র মো. আতিক উল্লাহ, সেন্টমার্টিনের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মৃত আবদুর রহমানের পুত্র ফাহাদ শাহীন, তার ভাই ফয়সালুর রহমান, করিম উল্লাহ পুত্র এজাজুল, আবদুল হামিদের পুত্র হাসিম, শাওনসহ আরও অজ্ঞাত ১৫ জন দখলবাজ ও সন্ত্রাসী। হামলায় গুরুতর আহত হয় ২০ জন পর্যটকসহ ড্রীম নাইট হোটেলের জিএম কফিল উদ্দিন ও ম্যানেজার হায়দার। আহতরা চিকিৎসা নিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে জখমের সনদপত্র নিয়েছেন।
আহত ড্রীম নাইট হোটেলের জিএম কফিল উদ্দিন ও ম্যানেজার হায়দার জানান, হামলাকারীরা চিহ্নিত দখলবাজ ও প্রতারক চক্র। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সন্ত্রাসী দিয়ে বিভিন্ন হোটেল দখল করায় তাদের কাজ। এই সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের নির্মম নির্যাতন করে হোটেল থেকে বের করে দেয়। পর্যটকদেরও তারা মারধর করে সব মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। এখনো হোটেলে তারা সশ^স্ত্র সন্ত্রাসী পাহারায় রেখেছেন।
ইকো হলিডেস এর পক্ষে চেয়ারম্যান জামশেদ আলম মামুন বলেন, পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ইকো হলিডেস লিমিটেড কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসা করে আসছি। শান্তিপূর্ণভাবে এতোদিন আমাদের ব্যবসা চলে আসছে। কিন্তু সন্ত্রাসী, দখলবাজ ও লুটপাটকারীদের কারণে পর্যটনে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে পর্যটন শিল্প। তাই আমরা সন্ত্রাসী ও দখলবাজ চক্রের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, ডিজিএফআই, র্যাব-১৫সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছি। এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দখল ও হামলার মূল পরিকল্পনাকারী মো. আল আমিন ছিদ্দিক আকাশ বলেন, ড্রীম নাইট বিলাদুল আমিন হাউজিং লিমিটেডের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানীতে ১৬ জন পরিচালক রয়েছে। তারমধ্যে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আবু সাঈদ নোমানের সাথে চুক্তি করে ইকো হলিডেস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। আবু সাঈদ নোমান কোম্পানীর বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাত করে বিদেশ চলে যায়।
তাই পরবর্তীতে গত ২০১৮ সালে শামসুল আলম নতুন এমডি ও আবদুল জব্বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে কমিটি গঠিত হয়। তাই নতুন কমিটির এমডি ও চেয়ারম্যান ও ইকো হলিডেস লিমিটেড এর সাথে গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চুক্তি করে। চুক্তিতে বলা হয় নোমানের সাথে চুক্তি করার সময় বাকি সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেয়ার কথা জানালে তাদের সেই টাকা ফেরত দেয়া হবে।
চুক্তি শেষ হলে নতুনভাবে চুক্তি করতে তাদের বলা হয়। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো বিলাদুল আমিন হাউজিং লিমিটেডের সাইনবোর্ড সরিয়ে নিজেরা মালিকানা দাবি করে। পরে গত ৩১ অক্টোবর আমরা পুলিশ সুপার ও টেকনাফ থানাকে অবহিত করে সেখানে গিয়ে তাদের হোটেল বুঝিয়ে দিতে বলি। তারা চাবি দিয়ে টুরিস্ট পুলিশের টিমকে মারধরের অভিযোগ করে। কিন্তু মারধরের কোন প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মাহমুদ তারেক বলেন, হোটেলের মালিকানা নিয়ে ঝামেলা চলছে। মালিকদের একপক্ষ জানিয়েছে গত ৩১ অক্টোবর ভাড়াটিয়াদের সাথে চুক্তি শেষ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা হোটেল ছেড়ে না দেয়ায় মালিকদের ওইপক্ষ গিয়ে হোটেলের চাবি দাবি করলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের উভয়পক্ষকে টেকনাফ থানায় সমঝোতার জন্য পাঠানো হয়।
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।