সৌহার্দ্যের ঈদ ও আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা

আর দু’দিন পরেই আসবে ঈদ-উল-ফিতরঃ আনন্দের, সৌহার্দ্যের ঈদ। মাগরিবের আজানের ধ্বনি গোধূলির রঙে মিশে, থমথমে শুনশান পাড়া বেয়ে গেরস্তের খাবারের থালা ও ঠাণ্ডা শরবতে পৌঁছাবে না ইফতারির মহানন্দ। থাকবেনা ভোর রাতে সেহেরির আয়োজন। এবারের ঈদকে সামনে রেখে সবচেয়ে ব্যথিত করবে ফিলিস্তিনের গাজায় উগ্রপন্থী ইসরায়েলের বর্বরোচিত হত্যাকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ। আরও বেদনাবিধুর করবে জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহত পরিবারগুলোর শোকবহ ঈদ।
বেশ কয়েক বছর ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি উঠছে, ক্রিসমাস বা দুর্গাপুজোয় যে ভাবে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার বলা হয়’ তবে কী এ কথা ইদের বেলায় খাটে না? নিশ্চয়ই খাটে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে ইদও সব ধর্মের মানুষের উৎসব হোক।
ঈদ উৎসবের ভেতরে আত্ম চরিত্রের নানা সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতাকে আয়নার মতো করে নিজের কাছে দেখে নেওয়ার সময়। প্রবৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিকতা, সহমর্মিতা, দয়া-দাক্ষিণ্য অনুশীলনের সময়। সঙ্কোচের, বিহ্বলতার, অপমানের ক্ষুদ্র গণ্ডি কেটে বেরিয়ে ইদের আনন্দকে, ইদের মানবিক দিকগুলিকে প্রসারিত করার সময়।
দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনায় মানবহৃদয়ে প্রশিক্ষণ পেয়ে যে তাকওয়ার সৃষ্টি হল এবার তা বাস্তবে পরিণত করার সময়। লোকচক্ষুর অন্তরালে, পুলিশি প্রহরা যেখানে নিষ্ক্রিয়, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী যেখানে অপারগ, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানেও আল্লাহ ভীতি একজন ব্যক্তিকে অপরাধমুক্ত রাখতে পারে। তাকওয়া মূলত নিজের জন্য নিজেই প্রহরী।
আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।
এবারের ঈদ সকলের মনে বয়ে আনুক ভ্রাতৃবোধ, জাতীয় ঐক্য ও দেশ প্রেমের শিক্ষা। সহমর্মিতা, সহানুভূতি জাগ্রত হয়ে লাভ করুক সকলে এ দীক্ষা।
প্রসঙ্গত, জাহেলিয়া যুগে আরবের মক্কায় ‘উকাজ মেলা’ এবং মদিনায় ‘নীরোজ’ ও মিহিরগান’;অশ্লীল আনন্দ-উল্লাসের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মদীনায় হিজরতের পরবর্তী বছর থেকে মুসলমানদের নির্মল আনন্দ উৎসবের আয়োজন করতে মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশনায় দু’টি ঈদ উৎসবের প্রবর্তন করেন। এ ঈদগুলো হল- শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখে ‘ঈদুল ফিতর’ বা ‘রোজার ঈদ’ অন্যটি জিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখে ‘ঈদুল আজহা’ বা ‘কোরবানির ঈদ’।