পটুয়াখালীতে তরমুজের বাষ্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

রমজানকে টার্গেট করে লাভের আশায় আগাম জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন পটুয়াখালী জেলার কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া আর উপকূলীয় উর্বর ভূমি হওয়ায় এ জেলায় এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করতে পেরে চাষীদের মুখে লেগেছে হাসির ঝিলিক।
শনিবার(১৫ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদ উপেক্ষা করে তরমুজ ক্ষেতের আগাছা ও পোকা দমনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। কিছু কিছু ক্ষেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফরিয়ারা এসে ছুটছেন তরমুজের ক্ষেতে। কেউ কেউ ফরিয়াদের কাছে ক্ষেত চুক্তিতে বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্থানীয় বাজারে তরমুজ তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। জেলার গলাচিপার সবচেয়ে বড় তরমুজ ঘাট আমখোলা মুশুরীকাঠি, গোলখালী সুহরীব্রিজ ঘাটটি। জেলার অধিকাংশ তরমুজ সরবরাহের লক্ষে আমখোলা থেকে হরিদেবপুর পর্যন্ত করা হয়েছে সাতটি ঘাট। গলাচিপার বিভিন্ন চর থেকে তরমুজ চাষী ব্যাপারীরা ট্রলারে করে তরমুজ নিয়ে আসেন ঘাটগুলোতে। মুশুরিকাঠি থেকে ট্রাকের আকারের ওপর ভাড়া নির্ধারিত হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। প্রায় ১ হাজার থেকে ১৩’শ মৌসুমি শ্রমিক দিন রাত কাজ করেন এই ঘাটে। ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ সাজাচ্ছেন শ্রমিকরা। তরমুজ ঘাটকে কেন্দ্র করে মৌসুমি দোকানগুলোও বেশ জমে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০টি তরমুজের ট্রাক যাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়া মুশুরিকাঠি থেকে হরিদেবপুর ঘাটেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি ট্রাক।
গলাচিপা উপকূলের চরের তরমুজ চাষি মোঃ খোকন জানান, গ্রেট ওয়ান, বিগ ফ্যামেলি, আনন্দ, আনন্দ সুপার, সুইট ফ্যামিলি, লাকী ড্রাগন, এশিয়ান-৩ ও ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ হয়েছে এ জেলায়। একটু বেশি লাভের আশায় গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছেন।
অপর দিকে কৃষক জহিরুল ইসলাম(৫৫) জানান, অজানা এক রোগের কারনে তার ক্ষেতের গাছগুলো মরে গিয়ে ফল নষ্ট হয়েছে।
কৃষক কামাল হোসেন (৩৬) জানান, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে ন্যায্য মুল্যে এ বছর সার কীটনাশক পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফুল প্রজনন করতে হয়নি।
গলাচিপা উপজেলা বেল্লাল প্যাদা নামের এক কৃষক অভিযোগ করে জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন তরমুজ চাষীদের কাছে তেমন আসেন না। শুধু এসে ঔষধ লিখে দিয়ে চলে যায়। তাদের আরও একটু তত্বাবধান কামনা করেন তিনি।
রাঙ্গাবালী ছোটবাইশদিয়ার চাষি মোঃ জসিম (৩৫) জানান, আট বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ২৭০০ পিছ তরমুজ কেটেছেন। ভালো দাম পাবার আশায় ঢাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
কাউকে এখন আর চাঁদা দিতে হয় না উল্লেখ করে রাজু আহম্মেদ নামের একজন ব্যাপারী জানান, ঢাকা থেকে তরমুজ কিনতে চর কাজলে এসেছেন তিনি। ক্ষেত থেকে ঢাকা পর্যন্ত তরমুজ প্রতি তার খরচ হয় ৩২-৩৫ টাকা।
ঘাট পরিচালক মোঃ বাচ্চু হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন এখানে প্রায় ১০০০-১৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি দিন বিভিন্ন চর থেকে তরমুজ নিয়ে চাষী ব্যাপারীরা এখানে আসে ট্রলারে করে। ট্রলার থেকে ট্রাকে তরমুজ ভরে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাট-বাজার মোকামে চলে যায়।