ইউসুফ চৌধুরী-রাজশাহী প্রতিনিধিঃ এক সময় ছিল আন্তর্জাতিক টেনিস টুর্নামেন্টের আসর দিয়ে রাজশাহীর অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শেষ হয়ে যেতো। পরের বছর আবার সে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আসরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো টেনিসপ্রেমীদেরকে। এরমধ্যে রাজশাহীর টেনিস খেলোয়াড়দের নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যেতো না। কিন্তু বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজশাহীর অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্সে বছরজুড়েই অব্যাহত রয়েছে, আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও ঘরোয়া টেনিসের চর্চা। এজন্য এই টেনিস কমপ্লেক্সে ইমনের মতো খেলোয়াড়রাও এখন বল বয় থেকে বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করছে। শুধু তাই নয়, রাজশাহীর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নজরে পড়ে খেলোয়াড়রা সহযোগিতা পাচ্ছেন। তবে টেনিস খেলা খুবই ব্যায়বহুল। যেটা রাজশাহীর অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্সের বর্তমান কমিটির কাছে খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত আর্থিকসহ অন্য সহযোগিতা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই খেলোয়াড়দের প্রতিভাকে বিকাশিত করার জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করার আহ্বান জানিয়েছে বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ। জানা গেছে, ঢাকায় ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বে রাজশাহী থেকে ৬ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছে। এরমধ্যে মেয়ে দুইজন এবং ছেলে চার জন ছিল এই টেনিস কমপ্লেক্সের। অংশগ্রহণকারীরা ২ জানুয়ারি ঢাকায় বাছাইপর্বের খেলায় অংশগ্রহণ করেছে। বাছাইপর্বের অংশগ্রহণকারী এসব খেলোয়াড়রা হলো- হালিমা জাহান, মন্দলিনী বাসকে সুমনা, আহনাফ মুনতাসির, মাহফুজ আল মাহাদী, আপন আহমেদ ও রমজান শরীফ আরিফ। এদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্ট ২০২২ অনূর্ধ্ব ১৪ ও ১৬ বালক ও বালিকা গ্রুপে আপন আহমেদ ও হালিমা জাহান বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে মূল পর্বে খেলার সুযোগ লাভ করেছেন। ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টের মূল পর্ব আগামী ১৪ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে।
এখানে রাজশাহীর টেনিস খেলোয়াড় আপন আহমেদ ও হালিমা জাহান অংশগ্রহণ করবে। করোনায় দীর্ঘ সময়ের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে রাজশাহী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্স। এখানে বর্তমানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। আবু হামেদ তাসওয়ার কলিন্স, খালেদা ফৌজিয়া চৈতি, সাদিয়া ইয়াসমিন এনি, আব্দুর রব, সুমাইয়া সুলতানা মনি ও আশিক খান এই ছয় জন স্থানীয় কোচসহ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আন্তজার্তিক মানের কোচ রবি শংকর সিং ১৫ দিনের একটা কোর্স করিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট (আইটিএফ) রাজশাহীতে আয়োজন না হলেও বাংলাদেশ গেমস ও গত জুন-জুলাই এ দেশের সকল ক্লাবের অংশগ্রহণে ক্লাব টুর্নামেন্ট এই টেনিস কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ডিসেম্বরে জুনিয়রদের ন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্টও রাজশাহীতে হয়েছে। খেলোয়াড় হালিমা জাহান বলেন, এখানে আমরা নিয়মিত টেনিস চর্চা করে থাকি। যাতে করে রাজশাহীর সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে তুলে ধরতে পারি। তবে টেনিস খেলা ব্যয় বহুল হওয়ায় আমাদের অনেক সময় অসুবিধার মধ্যে দিয়ে চর্চা অব্যাহত রাখতে হয়। এরপরও বিশ্বের বুকে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জলভাবে তুলে ধরতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমি অনূর্ধ্ব ১২ ও ১৪ তে দুইবার জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ওয়ার্ল্ড জুনিয়র টেনিস টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে খেলোয়াড়রা আন্তজার্তিকমানের কোচের নির্দেশনা পেয়েছেন হালিমার মতো স্থানীয় টেনিস খেলোয়াড়রা। গত ডিসেম্বর মাসে ১৫ দিন এসব খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ভারতের আন্তর্জাতিকমানের কোচ রবি শংকর সিং। যিনি আন্তজার্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন খেলায় কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। রবি শংকর সিং জানান, করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে খেলোয়াড়রা খেলাধুলার বাইরে ছিলো। একারণে তাদের ফিটনেসের কিছুটা সমস্যা ছিলো। তাদের সে দুর্বলতাগুলো ১৫ দিনে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। রাজশাহী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হুদা দুলু বলেন, রাজশাহীর খেলোয়াড়দের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টেনিস আসরে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে টেনিস কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক। একারণেই দেশের বাইরে থেকে দক্ষ কোচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখানে যারা নিয়মিত কোচ আছেন, তারা হয়তো রবি শংকর সিং-এর মতো ততোটা দক্ষ না। কিন্তু এরাও রবি শংকর সিং এর মতো কোচের সান্নিধ্যে এসে নিজেরা শাণিত হয়েছেন। এহসানুল হুদা দুলু আরও বলেন, এই কমপ্লেক্সে এখন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গত ১০ থেকে ১৬ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জব্বার স্মৃতি টেনিসে জাতীয় টুনার্মেন্টেও খেলোয়াড়রা ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। আর আমি ব্যক্তিগত খরচে বিদেশি কোচ দ্বারা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছিলাম। এই খেলা খুবই ব্যায় বহুল। এখানে আরও পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন। খেলোয়াড়দের জন্য যদি মাসে কোন সম্মানির ব্যবস্থা করা যেত, তাহলে তারা অনুপ্রাণিত হতো। আর ক্লাবের মেম্বারদের থেকে যে টাকা উঠে। এটা দ্বারা ক্লাব চালানোই অনেকটা কষ্টকর। আয়ের তেমন উৎস নেই। তবে এখানে একটা গেস্ট হাউজ আছে। যেখানে পাঁচটা রুম আছে। এটার একটু প্রচারণা দরকার। এখান থেকে কিছু আয় আসে। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই যে বিদেশি কোচ নিয়ে আসা। আর বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যেসব খেলোয়াড়রা নিজেদের খরচ বহন করতে পারে না। তাদের খরচ আমি ব্যক্তিগতভাবে বহন করি। এক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রাজশাহীর খেলোয়াড়রা আরও এগিয়ে যাবে।
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।