আবিদ হাসান:হরিরামপুর,মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলায় গালা ইউনিয়নের হাট বাসুদেবপুর গ্রামে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে বসতি গড়ে কিছু বেদে ও শান্দার পরিবার। বর্তমানে এ গ্রামে প্রায় ১৬৩ বেদে ও শান্দার পরিবারের বাস। এদের মধ্যে অন্যান্যদের মাথা গোঁজার ন্যূনতম ঠাঁই থাকলেও এখনো প্রায় ২০টি পরিবার নৌকায় বসবাস করে। বেদে ও শান্দার সমাজের ভোটার সংখ্যাও প্রায় সাড়ে তিনশ’। স্থানীয়দের কাছে তাদের ‘শান্দারপাড়া’ নামেই বেশি পরিচিত।
বেদে ও শান্দার সমাজের প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিপূর্বে পার্শ্ববর্তী সমাজের কবরস্থানে তাদের সমাজের লোকজনকে কবর দেওয়া হলেও বিগত এক বছর যাবত ঐ কবরস্থানে ভূমির স্বল্পতা ও ঐসমাজের লোকদের দাফনের কারণ দেখিয়ে তাদেরকে কবর দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এর কারণে বেদে ও শান্দার সমাজের কেউ মারা গেলে তাদেরকে নিজ নিজ বসত বাড়িতেই দাফন করা হচ্ছে। ফলে সমস্ত বেদে ও শান্দারপাড়াই যেন হয়ে উঠেছে এক কবরস্থান।
এ অবস্থায় বেদে ও শান্দার সমাজের পাশে এসে দাড়ান স্থানীয় সমাজসেবী ও মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্য সচিব মামুন চৌধুরী। নিজে উদ্যোগ নিয়ে বেদে ও শান্দার সমাজের জন্য আলাদা কবরস্থান করার জন্য শালখাই মৌজায় ১৩ শতাংশ জমি কেনার জন্য এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বায়না দেন।
মামুন চৌধুরী জানান, স্থানীয় কিছু প্রবাসীর অনুদান দেওয়ার কথা থাকলেও করোনার সংকটে কেউ আর অনুদান দেয়নি। বেদে ও শান্দার সমাজের লোকজনের পক্ষেও বাকি টাকা ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে তিনি যোগাযোগ করেন গাজীপুর জোনের সিআইডির এএসপি এনায়েত করিম রাসেল এর সাথে, যিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তিনি বেদে ও শান্দার সমাজের জন্য কবরস্থান নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এনায়েত করিম রাসেলের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)। তিনি নিজে কবরস্থানে অনুদান দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান ও এএসপি এনায়েত করিম রাসেল বেদে ও শান্দার সমাজের জন্য কবরস্থানের বায়নাকৃত জায়গা পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা কবরস্থানের ১৩ শতাংশ ভূমির মূল্য, মাটি ভরাট ও বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদানের আশ্বাস দেন। এছাড়াও, যে সমস্ত বেদে ও শান্দার পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই এর অভাবে এখনো নৌকায় বাস করেন, তাদের জমি ক্রয় ও ঘর নির্মাণে সহযোগিতা করবেন বলে ডিআইজি হাবিবুর রহমান আশ্বাস প্রদান করেন।
শানদার পট্টির ওয়াসিম শান্দার জানান, আমাদের বড় ধরণের সমস্যার কথা শুনে সাড়া দিয়ে ডিআইজি স্যার ও এএসপি এনায়েত করিম রাসেল স্যার নিজেই এসেছেন, বেদে ও শান্দার সমাজের পাশে দাড়ানোয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বেদে ও শান্দার সমাজের প্রতিনিধি শরিফ মিয়া (দুর্জয় শরিফ) বলেন, একটি বছর প্রায় প্রতিদিন আমি কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছি। আল্লাহর কাছে আমাদের এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রার্থনা করেছি। আজ এএসপি এনায়েত করিম রাসেল ও মামুন চৌধুরীর মাধ্যমে ডিআইজি স্যারের সহযোগিতায় আমাদের নিজেদের একটি কবরস্থান হলো। আল্লাহর কাছে তাদের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের কামনা করছি।
স্থানীয় আরেক সমাজকর্মী- মেহেদী হাসান টুটুল বলেন, ডিআইজি স্যারের এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। ইহ জনমে না হোক, পর জনমে আল্লাহ এর প্রতিদান অবশ্যই দেবেন।
ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, আমার সহকর্মী পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি এনায়েত করিম রাসেল আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং বলেছেন একখানে একটি কবরস্থান করে দেয়া যায় কিনা। এ প্রেক্ষিতেই আজ আমরা এখানে এসেছি এবং জায়গাটি দেখেছি। এ সময় সকলের উদ্দেশে তিনি বলেন, মানুষের পেশা বিভিন্ন রকম হতে পারে, এর কোনটিই কিন্তু ছোট নয়। আমি স্থানীয় জনগণের প্রতি আশা করবো তারা সচেতন হবেন, সহৃদয়বান হবেন, সহমর্মী হবেন এবং অবহেলিত বেদে ও শান্দারদেরকে সমাজের সাথে একত্রিত করে যাতে নেওয়া যায় তারা সে চেষ্টা করবেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঈদ চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন বাচ্চু, গালা ইউপি চেঃম্যান সফিক বিশ্বাস প্রমুখ।
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।