ছাত্রলীগের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তে নতুন চাপে নেতাকর্মীরা

ছাত্রলীগের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তে নতুন চাপে নেতাকর্মীরা
নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির খবরে নতুন করে চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছেন সংগঠনটির সদস্যরা। যারা গোপনে চলাফেরা করছিলেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছিলেন, তাদের জন্য বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশের থানাগুলোতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ থানায় ইতোমধ্যেই এই নির্দেশনা পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তালিকা তৈরির জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
থানাগুলোতে পাঠানো নির্দেশনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের—
– নাম
– জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর
– পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে)
– রাজনৈতিক পরিচয় ও সংগঠনে অবস্থান
– অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিবরণ
– মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সংক্রান্ত তথ্য
এই তথ্যগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, সামাজিক কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বুঝতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পর্কেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ করছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে যান। তবে গোয়েন্দা তথ্য বলছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির সদস্যরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে সংগঠনটির নাম ছিল “পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ”। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর এটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নামে পরিচিত হয়।
স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখে।
২০২4 সালের ২৩ অক্টোবর সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা—
– হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নে জড়িত ছিল
– ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের ওপর হামলা চালিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে
– ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে
এই কারণেই ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ধারা-১৮ অনুযায়ী সরকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সংগঠনটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।