মোটর স্পোর্ট হলো আলটিমেট ফিজিক্যাল স্পোর্টস। প্রতিটি রেসের পর আমার দুই কেজি করে ওজন কমে। পৃথিবীতে ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভাররা আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো সবচেয়ে বেশি ফিট অ্যাথলেট। মোটর রেসিংয়ে কী পরিমাণ চাপ শরীর আর মনের ওপর পড়ে, বুঝতেও পারবেন না,’ বলছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মোটর রেসার অভিক আনোয়ার। ১৭ ফেব্রুয়ারি বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে কারহাউস ইমপোর্টসে তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। এটা অভিকেরই মোটরগাড়ি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাঁর বাবারও গাড়ির ব্যবসা আছে। সত্যি বলতে কি, বাবার গাড়ির ব্যবসার সুবাদেই ছোটবেলা থেকে গাড়ির প্রতি তাঁর আগ্রহ। অভিকের রেসিং ড্রাইভার হয়ে ওঠার এটাও একটা কারণ।
কদিন আগেই ভারত থেকে জয় নিয়ে ফিরেছেন অভিক। এটা ছিল ভারতের জাতীয় ট্যুরিং কার চ্যাম্পিয়নশিপ-ভক্সওয়াগন পোলো কাপ। ভারতের এবারের প্রতিযোগিতা হয়েছে চেন্নাইয়ে মাদ্রাজ মোটর রেস ট্র্যাকে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসে শেষ হলো এই প্রতিযোগিতা। আর ফলাফল? চ্যাম্পিয়নশিপে চতুর্থ হয়েছেন অভিক আনোয়ার। সাফল্য আরও আছে। এটির রাউন্ড ২, রেস ২ ও রাউন্ড ৩, রেস ২-এ দ্বিতীয় এবং রাউন্ড ৪, রেস ২-এ প্রথম হয়েছেন অভিক। শুধু তা–ই নয়, এই প্রতিযোগিতায় তাঁর ছাত্র ইশায়েত হোসেনও অংশ নিয়েছেন। জুনিয়র (নবাগত) শাখায় ইশায়েত হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। আরও দুই বাংলাদেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন।
অভিকের কাছে জানা গেল, মোটর রেসিং প্রতিযোগিতার তিনটি ঘরানা। ফরমুলা ওয়ান, ট্যুরিং কার এবং ওয়ার্ল্ড র্যালি। অভিক বললেন, ‘এর মধ্যে ট্যুরিং কারের প্রতিযোগিতাই হয় বেশি। ভারতেরটাও এই ক্যাটাগরি। ২২টি গাড়ি। ট্যুরিং কারে সবার গাড়ি সব দিক থেকে একরকম থাকে।’
অভিকের গতিময় জীবন
১১ বছর বয়সেই গাড়ি চালানো শিখেছেন অভিক। আর রেসিং? ‘টিভিতে নিয়মিত রেসিং দেখতাম। ফরমুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে মাইকেল শুমাখার ও মিকা হ্যানিকেনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখে রেসিংয়ের প্রতি ভালোবাসা।’ এভাবেই ২০০৭ সালে রেসিংয়ের শুরু। ঢাকায় স্কলাস্টিকা স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তখন তিনি কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক করছেন। ‘প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করলাম। আর সেটা বেশ ব্যয়বহুল। টাকা জোগাড়ের জন্য তীব্র ঠান্ডায় পিৎজা ডেলিভারির কাজও করেছি,’ জানালেন ৩৬ বছর বয়সী অভিক। নিজের মতো করেই অভিক শিখলেন রেসিং।
২০১৪ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে র্যালি ক্রস চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিলেন। হলেন চ্যাম্পিয়ন। ২০১৫, ২০১৬-তেও চ্যাম্পিয়ন। তখন অভিকের মনে হলো, এবার বাইরে যাওয়া যাক। ভারত থেকে পরীক্ষা দিয়ে রেসার লাইসেন্স নিলেন। ২০১৭ সালে ভারতে প্রথম রেসে অংশ নিলেন অভিক। সেটা ছিল ইন্টারন্যাশনাল মোটর স্পোর্টসের আয়োজন। হলেন চতুর্থ। পরের দুই বছরে কোনো রেসিংয়েই তিনের মধ্যে পৌঁছাতে পারেননি অভিক। ২০১৯ সালে আবার এল সাফল্য। কীভাবে সম্ভব হলো?
অভিক বলেন, ‘সেবার রেসিংয়ের আগে মোবাইল, ফেসবুক—সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করলাম। আসলে খুব গভীর মনোযোগের প্রয়োজন। কার রেসিংয়ে রিফ্লেক্স খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।