নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সদরের বৃহত্তর বাণিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁওর শেফালী পালের দুঃখের সারথি হলেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল।রবিবার (২৯ নভেম্বর) তার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন ইজিবাইক (টমটম)।জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নীচে উপহার তুলে দেয়ার সংক্ষিপ্ত আয়োজনে আবিভূত হন শেফালী।এ সময় তিনি জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপহার তুলে দেয়ার প্রাক্কালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি জাহেদ সরওয়ার সোহেল, সদরের ইউএনও সুরাইয়া আক্তার সুইটি সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।শেফালী পালকে সবাই ‘শেফালী মাসী’ হিসেবে ডাকে। কক্সবাজার জেলার বৃহত্তম বাণিজ্যিক উপশহর ঈদগাঁহ বাজারের অলিগলি, পথে-প্রান্তে খবরের কাগজের বোঝা হাতে নিরন্তর ছুটে চলা ষাটোর্ধ বয়সী তিনি এক সংগ্রামী নারী।মধ্যযৌবনেই সিঁথির সিঁদুর মুছে গেছে তাঁর। বিধবার তিলকে রাজটীকা হয়ে উঠেছিল একমাত্র পুত্র স্বপন পাল।পুত্র স্বপনকে ঘিরে বেড়ে উঠা স্বপ্নগুলি রাঙানোর কোন কমতি রাখেন নি। স্বপনকে পড়ালেখা শিখিয়েছিলেন নিম্ন মধ্যবিত্তের সর্বোচ্চ সীমারেখার মধ্যে।স্বপনই একদিন শিক্ষিত হকার হয়ে হাল ধরে শেফালী সংসারে। বিয়ে করে সংসারী হয় স্বপন। ঘর আলো করে নাতি নাতনী আসে শেফালী পালের সংসারে। পুত্র, পুত্রবধু আর নাতি-নাতনী নিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিল শেফালীর একান্নবর্তী সংসার।হঠাৎ একদিন, সেই পুত্র স্বপনও দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।পুত্র স্বপনের প্রয়াণ শোক কাটিয়ে উঠার আগেই চুলায় ভাতের হাড়ি চড়াতে শেফালী পাল নেমে পড়লেন পত্রিকা বিক্রির পেশায়। কারো দয়া-দাক্ষিণ্যে কিংবা করুণার আর্দ্রতায় ভিজেনি পুত্রশোকাতুর বিধবা শেফালী পালের কপর্দকহীন দুই হাত। সেই শূণ্য দু’হাতে তুলে নিলেন সংবাদপত্র। তুলে নিলেন সংসারের জোয়াল-লাঙল-ঘানি। সংসারের অচল চাকা সচল হলো, পেল গতি। আর সেই গতিতেই বেড়ে উঠে স্বপনের দুই সন্তান।গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই পত্রিকার বোঝা হাতে এই দোকান থেকে সেই দোকান, পথ থেকে ফুটপাথে, জনবহুল জংশন কিংবা ব্যস্ততামুখর স্টেশনে স্টেশনে চলছে বয়োবৃদ্ধা শেফালী পালের এই হকার জীবন। বয়স চাপেও দমাতে পারেনি।হকার শেফালী কারো আর্থিক সাহায্য কিংবা করুণা চান না। সমাজের মানবিক হৃদয়ের মানুষের কাছে শুধু তার একটাই চাওয়া, সদ্য এইচএসসি পাশ করা নাতনী আর স্বল্প শিক্ষিত নাতির জন্য চলনসই দুইটা চাকরি।নাতি-নাতনীকে কোনমতে স্বাবলম্বী করা গেলে পত্রিকা বিক্রির পেশা থেকে অবসর নিয়ে বাকি জীবনটা একটু বিশ্রামে কাটাতে চান শেফালী পাল। কথাটি জেলা প্রশাসককেও তুলে ধরেছেন তিনি।জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন তার কথাটি গুরুত্ব দেন এবং কোন একটা চাকুরির ব্যবস্থা করা যায় কিনা, দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।জীবনযোদ্ধা নারী হকার শেফালী পালকে মমতাঘেরা সহায়তা দেয়ায় সংবাদকর্মীসহসর্বপেশার মানুষজন জেলা প্রশাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।এর আগে জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ঈদগাঁওয়ের সংবাদকর্মী শাহিদ মোস্তফা শাহিদের মাধ্যমে শেফালী পালের পরিবারকে নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নিয়ে যান।
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।