মারজান চৌধুরী,উখিয়া:
মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা আসার পর কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে স্থানীয় ভৌগোলিক ও বাস্তগত পরিবেশের ক্ষতি সর্বজনবীত। উশৃংখল রোহিঙ্গারা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় জনগনের।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ও দেশ-বিদেশি এনজিও এর অবস্থান এর কারণে বেড়েছে জীবনযাত্রার দাম। নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর দাম বর্তমানে অনেক বেশী। কিন্তু দেশি-বিদেশি অসংখ্য এনজিও ক্যাম্পে কাজ করলেও বাড়েনি এই এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের কোন চাকুরির সুযোগ বা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে কোন সুযোগ সুবিধা।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো হতে প্রকল্প অনুমোদনের সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটের ২৫%-৩০% বরাদ্দ থাকলেও ,সরেজমিনে দেখা যায় কেউ এই এই নিয়ম মনছেনা। অর্থাৎ কোন প্রকল্প প্রণয়ন বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগনর কোন কথাই ভাবা হচ্ছে না। এই কারণে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ ‘দের সংগায়িত কত্তে তালিকাভুক্ত করা অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে বলে মতামত সংশ্লিষ্টদের।
এর মধ্যে, মাড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের বঞ্চিত করে বিভিন্ন এনজিও কর্তৃক অনিয়মভাবে রোহিঙ্গাদের চাকুরী দিচ্ছে । সরে জমিনে আরো দেখা যায়, আইন অমান্য করে দেশি-বিদেশি এনজিও রোহিঙ্গাদের দৈনিক ভলেন্টিয়ার ও বিভিন্ন পদে চাকুরী দিচ্ছেন। এনজিও গুলোতে উচ্চপদে যোগ্যতা থাকার সত্ত্বেও উপরন্তু ও নিন্ম পদেও স্থানীয়দেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকা গুলোতে স্থানীয়রা ক্ষোভ বিরাজ করছে ফলে যা ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় শৃংখলা ও স্বচ্ছতার জন্য স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া সঠিক সংঞায়ন করে তাদের অন্তর্ভুক্তে উপর জোড় দিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে তারা এনজিও ব্যুরো, আরআরআরসি ও জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ কামনা করেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
গত ২৮ আগষ্টের ১৮ সালে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে এনজিও বিষয়ক সমন্বয় এক সভা অনুষ্টিত হয়, অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিয়ানমার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে (২৫%-৩০%) প্রকল্প কাজ সম্পাদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
পরে মাননীয় জেলা প্রশাসক এক ভিগগপ্ত জারি করে যার নং- এনজিও বিষয়ক ব্যুরো স্মারক-০৩.০৭.২৬৬৬.৬৬১.৫১.০১৯.১৭.১০। আরো উল্লেখ আছে যে, চাকুরী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট আছে ।
বিজ্ঞপতে আরো উল্লেখ আছে রোহিঙ্গাদেরকে কোন অবস্থায় চাকুরী বা ভলেন্টিয়ার হিসেবে এনজিওতে কাজ করতে দেয়া যাবে না এবং এনজিওর আইড়ি কার্ড ব্যবহার করতে পারবেনা। অতি প্রয়োজনীয় হলে জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করতে হবে।
অনিয়মভাবে প্রত্যেক এনজিও প্রত্যেকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদেরকে চাকুরী বা ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ দিচ্ছে। আরো উল্লেখ আছে যে, চাকুরী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট থাকলে ও কোন এনজিও তা মানছে না। চাকুরীর নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় হোস্ট কমিউনিউটি বলে বৃহত্তর চট্টগ্রামকে উখিয়া-টেকনাফবাসির ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। আসলে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় হোস্ট কমিউনিউটি উখিয়া-টেকনাফ ছাড়া অন্য কোন এলাকা হতে পারে না।
তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ- ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট কমিউনিটির সীমানা বা ভৌগোলিক ম্যাপ নিদিষ্ট করা হোক উখিয়া-টেকনাফবাসির দাবি। চাকুরীর নিযোগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের ৭০% কোটা নির্ধারণ করা হোক।যেহেতু উখিয়া-টেকনাফের ৮০%জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে এবং রোহিঙ্গাের সস্তায় শ্রমের কারণে শ্রম বাজারেও স্থানীয়রা বঞ্চিত। এমতাবস্থায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রোহিঙ্গারা এনজিওতে (এমএসএফ) চাকরিতে কর্মরত আছেন তাদের কিছু তালিকা হাকিম পাড়া ক্যাম্প ১৪- জানি আলম (সুপার ভাইজার), হামিদ হোসেন, মোঃ রিদুয়ান, আরফাত, মোঃসুআইস,আজিজু উল্লাহ,আরমান উল্লাহ সৈয়দ আমিন, নুর হাকিম, মোঃআনুয়ার, আরফাত উল্লাহ, মোঃ রফিক, শফিক উল্লাহ, নুর কবির,মোঃইয়াকুব, সাদ্দাম হোসেন, রহমত আলী; ক্যম্প-১৫: জাফর উল্লাহ,হামিদ উল্লাহ,আব্দুল হামিদ, মোঃ হালেদ,নুর বশর,জেসমিদা,নুর ফাতেমা, ফারেজ উদ্দিন, মোঃ রশিদ সহ আরো অনেকে বিভিন্ন এনজিওতে চকরিতে কর্মরত আছেন যাদের নাম নিতে সম্ভব হয়নি।
এই বিষয়ে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি (৫নং পালংখালী ইউনিয়ন) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারাবরে ৭ দফা দাবি দিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর’২০ একটি স্মারক লিপি প্রদান করেন যার নং অবাক ২০.৮.০০২।
৭ দফা দবির মধ্যেঃ
১. ইউএন (জাতিসংঘ) অর্গনাইজেশন এনজিও গুলোদের বাজেটের ৩০% শতাংশ স্থানীয়দের উন্নয়নে ব্যয়করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী কাজের সঠিক বাস্তবায়ন এবং তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
২.সরকারের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গা প্রোগ্রামে এনজিওর চাকরিতে স্থানীয় জনগনের যে ৭০% কোটা নির্ধারণ হয়েছে ৫নং পালংখালীর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
৩.নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল করতে হবে।
৪.মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে এনজিও বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
৫.স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোটায় অথবা আওতাধীন কারা হবে তার ভৌগলিক ম্যাপ/ সীমানা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৬. এনজিওতে চাকরির জন্য প্রতিটি অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে
৭. ইউনিয়নের স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আধুনিক মানের হাসপাতাল হবে এবং ইমার্জেন্সি রোগীর জন্য ২৪ ঘন্টা ফ্রী এম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবস্থা করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা মানসিক ও পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দিলেও দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উলটেছ প্রতিদিনে এমন কোন অপরাধ নাই যেটা তারা করেনা।এ ব্যাপারে মননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে স্থানীয় জনগণ।
প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।