বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসেবে অনুযায়ী দেশের শিল্প খাত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে লবণের চাহিদা প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ টন। বিসিক সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কক্সবাজার ও টেকনাফে প্রায় ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ফলে চাহিদার অনুপাতে লবণ সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন এ চাহিদার পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ টন। গত কয়েক বছরে ডিটারজেন্ট, ডায়িং, নিটিংসহ খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ায় শিল্প খাতে লবণের চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। ফলে নতুন কারখানাগুলোতে কী পরিমাণ লবণ প্রয়োজন তার হিসেবে বিসিকের কাছে নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
দেশীয় লবণ শিল্প রক্ষায় পণ্যটি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের কিছু ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত লবণ সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, একটি করপোরেট কোম্পানি বাজারে নতুন মিল চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। তার আগেই তারা বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত লবণ মজুদ করে রেখেছে।
মধ্যস্বত্বভোগীরাও নগদ টাকার প্রলোভনে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লবণ বিক্রি করছে। ফলে ক্ষুদ্র মিলাররা অপরিশোধিত লবণ সংকটে পড়েছেন। বর্তমানে প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণের দাম ৭০০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২০ টাকায়। ফলে উৎপাদিত লবণের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ৪-৫ টাকা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, কক্সবাজারে যে লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়নি। এছাড়া সরকারি হিসাবেই পাঁচ লাখ টন লবণের ঘাটতি আছে। ফলে ঘাটতি পূরণে লবণ আমদানি করা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুদ্দিন আহমেদ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর দখলে চলে গেছে। লবণের বাজারও তাদের নিয়ন্ত্রণে। এসব কোম্পানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত লবণ মজুদ করে রেখেছে। ফলে ক্ষুদ্র মিলাররা লবণ সংকটে ভুগছেন। এ সময় অপ্রয়োজনীয় মজুদ এড়াতে সরকার ও বিসিকের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন মাঈনুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, কোনো কোম্পানি প্রয়োজনের অধিক লবণ মজুদ করছে কিনা তা সরকারি সংস্থাগুলোর খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে ছোট মিলগুলো যাতে পর্যাপ্ত উৎপাদন করতে পারে সেজন্যও মনিটরিং দরকার।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র মিলাররা যদি উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পারেন, তবে বাজারে লবণের সংকট তৈরি হবে না। কারণ এসব মিলারের মজুদ করার সক্ষমতা নেই। ফলে প্রতিদিনের উৎপাদিত লবণ বাজারে ছাড়তে হয়। এতে করে সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। বিষয়টির প্রতি সরকারের নজর দেয়া উচিত।