লেখক: শান্ত পাহান (ঠাকুরগাঁও) রাণীশংকৈলের পাহানরা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সিমান্ত কোলঘেষা ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় বসবাস করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুযায়ী তারা ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠীর (মুন্ডা) জাতি নামে পরিচিত। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার তাদের আদিবাসী নামে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি তাই তারা এখনো সবাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। পাহানরা তারা হলেন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মুন্ডা সম্প্রদায়ের কিন্তু তারা তাদের নামের শেষে পাহান পদবী ব্যবহার করে থাকেন। পাহানদের এইদেশের কিছু কিছু মানুষ পাহন, আদিবাসী, উপজাতি, ও মুন্ডা জাতি নামে চিনে এবং জানে। সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগতেই পারে যে পাহান সম্প্রদায়ের লোকেরা কোথায় থেকে এসেছে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে? আমি যেহেতু পাহানদের সম্পর্কে কথাগুলা লিখতেছি, তাই আমি বলতে চাই যে, আমিও কিন্তু পাহান সম্প্রদায়ের সন্তান। আমি ছোট বেলা থেকে আমার গ্রামে পাড়াপড়শি ও আত্মীয় স্বজনদের মুখে শুনেছি যে, আমাদের পাহান সম্প্রদায়ের লোকেরা নাকি আগে এই দেশে ছিলো না। যদিও ছিলো কিন্তু খুব বেশি না অল্পসংখ্য। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাহান সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এই দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছিলো। আমাদের বাংলাদেশে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে এই দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। পাকিস্তান আর্মি অবশেষ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরাজিত হয়েছিলো। তারা আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৬ই ডিসেম্বর মাসে যখন স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা উড়ে দেশে। তখন আমাদের পাহান সম্প্রদায়ের লোকেরা জানতে পারে যে আমাদের বাংলাদেশ পাকিস্তান হানাদার মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয়েছে। আবারো ভারতের নাগরপুর, ঝাড়খণ্ড, রাচি, জলপাই শিল্লিগড়ি, রায়গঞ্জ থেকে শুরু করেন এই দেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাংলাদেশের পাহানরা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে বসবাস করেন। উত্তরবঙ্গের সমতলের ভুমিতে পাহানরা বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও সহ পঞ্চগড় জেলায় বসবাস করেন। পাহানদের সমাজ ব্যবস্থা: পাহানরা তাদের সমাজে একজনকে প্রধান মনে করেন সেই হলো তাদের গ্রামের প্রধান যাকে তারা মোড়ল বা মন্ডল বলে। পাহানরা গ্রামের এই প্রধানের কথা মতো তারা বসবাস করেন। এবং তার কথা মতো চলাফেরা করতে হয়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততোই তাদের সমাজটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, এখন পাহানরা তেমন আর তাদের গ্রাম প্রধানকে মূল্যায়ন করেন না তারা এখন তাদের ইচ্ছে মতো চলাফেরা করেন। পাহানদের ধর্ম : পাহানরা কেউ সনাতন ধর্মাবলম্বীর আবার কেউ খ্রিস্টান ধর্ম পালন করে থাকেন। পাহানদের ভাষা: পাহানরা সাধারনত সাদরী ভাষায় কথা বলে থাকেন। পাহানদের ছেলে- মেয়েরা এই ভাষায় কথা বলেন। এই জন্য তাদের মাতৃভাষা। পাহানদের গোত্র: রাজপুত, কছুয়া, সাংগুয়া, তির্কি বিন্ধা সহ আরো গোত্র আছে। পাহানদের সমাজে গোত্রের সাথে গোত্রের ছেলে মেয়ের বিবাহ দেওয়া নিষিদ্ধ করা আছে। পাহানদের খাদ্য : পাহাদের খাদ্য হচ্ছে, ভাত, শাক- সবজি, খাল - বিলে নদীতে পাওয়া যায় শামুক ঝিনুক কাকড়া কুচিয়া মাছ, ইদুর সহ ইদুর সহ ইঁদুর মতো দেখতে ধাড়িয়া খেয়ে থাকেন। পাহানদের পুরুষেরা সবাই শিকারে পারদর্শী। পাহানরা তীর ধনুক দিয়ে বনে জঙ্গলে শিকার করে থাকেন। পাহানদের কাজ: পাহানরা নিজের ফসলের জমিতে চাষাবাদ করেন। আর বাকি কিছু পাহানরা নারী পুরুষ উভয়ে অন্যের জমিতে প্রতিদিন কাজ করতে যান। দিন আনেন দিন খান। এইভাবে তারা সংসার চালান। পাহানদের পোশাক ও সাজসজ্জা: পাহানদের নারীরা হাতে চুড়ি কানে দুল আর গলায় মালা পড়ে থাকেন। পাহান পুরুষেরা লুঙ্গি আর ধুতি পড়েন। পাহান যুবক- যুবতীরা ছেলেরা শার্ট প্যান্ট আর মেয়েরা পায়জামা সালোয়ার কামিজ সহ ডিজাইন নানান বাহারে পোশাক পড়ে থাকেন।
পাহানদের ধর্মীয় উৎসব: পাহানরা ভাদ্র মাসে একাদশী তিথিতে কারাম পুজা পালন করেন। যা পাহানদের সমাজে সর্ববৃহৎ ঐতিহাসিক পূজা হলো বৃক্ষ- গাছের ডাল দিয়ে কারামপুজা। পাহানরা ফাল্গুন মাসে ফাগুয়া উৎসব ও সোহরাই সোহরুল, সহ বুড়াবুড়ি ডাংগরী পুজা করে থাকেন।
সম্পাদক : মোহাম্মদ রুবেল, প্রকাশক : এম এইচ আরমান
১৫৮ ডিআইটি এক্সট রোড (২য় তলা) ফকিরাপুল, ঢাকা-1000, বাংলাদেশ। মোবাইলঃ সম্পাদকঃ ০১৯০৬০৫৬৩৯৯ ; প্রকাশকঃ ০১৮৭৬৫৪৪৮২৯ ; বিজ্ঞাপনঃ ০১৭৭৫৭৯৭০৮৫ ; E-mail: info@ekusheybarta.com ; Gmail: ekusheybartaonline@gmail.com
২০১৩-২০২৩© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত