ঢাকাবুধবার , ২৭ জানুয়ারি ২০২১
  1. অপরাধ
  2. অর্থনৈতিক
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. খুলনা
  7. খেলাধুলা
  8. গণমাধ্যম
  9. চট্টগ্রাম
  10. জাতীয়
  11. জেলা/উপজেলা
  12. জোকস
  13. ঢাকা
  14. তথ্য প্রযুক্তি
  15. ধর্ম

এক যুগ ধরে শিকলে বাঁধা সাহিদার জীবন

একুশে বার্তা
জানুয়ারি ২৭, ২০২১ ১২:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আবিদ হাসান, মানিকগঞ্জ:
খাবার,গোসল, ঘুম সবই হয় শিকলবন্দী অবস্থায়। এমনকি প্রস্রাব—পায়খানাও,পায়ে শিকল, শিকলবন্দী অবস্থাতেই কাটছে তার দিন—রাত। ঘরের বারান্দার একপাশের ছোট একটি কক্ষেই কাটছে তার জীবন। এভাবেই কেটে গেছে তার এক যুগ। শিকলবন্দী এ নারীর নাম সাহিদা বেগম (৪৮)। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউপি’র গালা গ্রামের দিনমজুর আমেরুদ্দিন মোল্লার (৫৮) স্ত্রী সাহিদা বেগম।

গত সোমবার সাহিদা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেমিপাকা চারচালা টিনের ঘরের বারান্দার একপাশের ছোট্ট একটি কক্ষে চৌকির উপর শিকলবন্দী অবস্থায় বসে আছেন সাহিদা বেগম। কক্ষে আছে একটি চৌকি ও একটি চেয়ার। চৌকির ওপর লেপ মুড়ি দিয়ে জড়সড় হয়ে বসে ছিলেন তিনি। লেপের কিছু জায়গায় ছিড়ে গিয়ে তুলো বেড়িয়ে পড়েছে। তার পরনে ছিল ময়লা একটা শাড়ি কাপড়। কক্ষ থেকে বের হওয়ার জন্য কোন দরজা দেওয়া হয়নি, জানালা সমান পরিমাপ করে জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। সেখান দিয়ে বের হয়েই তাকে প্রস্রাব—পায়খানা সারতে হয়। সাহিদা বেগমের সুবিধার্থে টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে বারান্দার প্রায় সাথেই। খাবারের সময় হলে বারান্দার কক্ষের সামনে চেয়ারে খাবার রেখে দেন তার স্বামী। সেখান থেকে নিয়েই খাবার খান তিনি। অনেক সময় তাকে খাইয়েও দিতে হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় পনের বছর আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে তিন সন্তানের জননী সাহিদা বেগম। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ডাক্তার—কবিরাজ—ফকির দিয়ে চিকিৎসা করালেও তাতে ফল হয়নি। দিনে দিনে সমস্যা বাড়তে থাকায় পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ৩৫ হাজার টাকার চুক্তি হয়। কথা ছিল সাহিদা বেগমকে তারা সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে দিবে। ১ মাস ১৩ দিন পরে ব্যবস্থাপত্র লিখে হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন ওই ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ালেও অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এরপরও বিভিন্ন ডাক্তার ও ফকির দিয়ে চিকিৎসা করালেও কোন লাভ হয়নি। আর্থিক অনটনের কারণে প্রায় তিন বছর যাবত চিকিৎসা—ঔষধ বন্ধ রয়েছে তার।

সাহিদা বেগমের দুই ছেলে এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। বড় ছেলে স্বপন মোল্লা জেলা সদরের একটি রেস্টুরেন্টে বাবুর্চির কাজ করেন। স্ত্রী—সন্তান নিয়ে ওখানেই বাসা ভাড়া থাকেন তিনি। ছোট ছেলে সোহেল মোল্লা ঢাকায় ছাপাখানায় চাকরি করেন। তার স্ত্রী—সন্তান বাড়িতে থাকলেও বাবা—মায়ের কোনো খোঁজ খবর রাখে না। ফলে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে আমেরুদ্দিন মোল্লা।

স্ত্রীর বিষয়ে কথা হলে আমেরুদ্দিন মোল্লা (৫৮) জানান, স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতার কারণে প্রায় ১৫ বছর যাবত তার সংসারটি এলোমেলো। দিন মজুরের কাজ করে সাধ্যমতো টাকা খরচ করে চিকিৎসা করিয়েও কোনো উপকার হয়নি। তার কোন জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে দিনমজুরির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে খাওয়া খরচ চালিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বর্তমানে সাহিদা বেগমের চিকিৎসা—ঔষধ বন্ধ রয়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন সাহিদা বেগম বিভিন্ন সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। অনেকবার খুঁজে তাকে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। এরপর থেকেই শিকলে বেঁধে রাখতে হয়েছে তাকে। নইলে কখন কোনদিকে চলে যায়, কিংবা গাড়ির নিচে পড়ে।

সাহিদা বেগমের স্বামী আরও বলেন, ‘‘দুই ছেলে বিয়ে করে তারা—তাদের মতো আলাদা খায়। আমাগো কোনো খোঁজ খবর রাখে না। আমাকে ঘরে বাইরে সব জায়গায় দেখতে হয়। নিজেই রান্নাবান্না করি। স্ত্রীকে দেখাশোনা করি। আবার মানুষের বাড়ি কামলাও দিতে হয়।”

সাহিদা বেগমের ভাবি বিলকিস জানান, অসুস্থতার আগে বেশ ভাল মানুষ ছিলেন সাহিদা বেগম। মানুষের সাথে খুব ভাল ব্যবহার করতেন। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আজ তার এই করুণ পরিস্থিতি।

গালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড সদস্য শেখ বারেক জানান, সাহিদা বেগমের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারনে দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারটি অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছে। মূলত সঠিক চিকিৎসার অভাবেই এখনো এই অবস্থায় রয়েছে। রোগীর যে অবস্থা তাতে সঠিক চিকিৎসা করতে পারলে হয়তো ভাল হতো। আমি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করি।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সাহিদা বেগমের চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতা পাইয়ে দেবার চেষ্টা করবো।

প্রিয় পাঠক, আপনিও একুশে বার্তা অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। লাইফস্টাইলবিষয়ক ফ্যাশন, স্বাস্থ্য, ভ্রমণ, নারী, ক্যারিয়ার, পরামর্শ, এখন আমি কী করব, খাবার, রূপচর্চা ও ঘরোয়া টিপস নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন ekusheybartaonline@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।

x