নতুন নীতিমালায় স্বচ্ছতার দাবি প্রশাসনের, শিক্ষকদের একাংশের আপত্তি
রাবিতে প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষায় শিক্ষক নিয়োগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে লিখিত পরীক্ষা। দীর্ঘদিন ধরে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ চললেও এবার থেকে নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, স্বচ্ছতা ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত। তবে এ পরিবর্তন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজে দেখা দিয়েছে মতপার্থক্য।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ উদ্দীন খান।
তিনি লেখেন, “রাবিতে শিক্ষক নিয়োগে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। এখন থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী তিন গুণ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য আহ্বান জানানো হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সম্মিলিত পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে।”
তিনি আরও জানান, বোর্ডের সদস্যরা নিজেরা উপস্থিত থেকে হাতে লিখে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন এবং বোর্ড সভাপতির কাছে জমা দেন। উপাচার্য প্রশ্নগুলো মডারেশন করে চার থেকে পাঁচটি প্রশ্ন চূড়ান্ত করেন। পরীক্ষার সময় ৪৫ থেকে ৫০ মিনিট। শেষে একজন সদস্য উত্তরপত্র কোডিং করে দিলে, সংশ্লিষ্ট প্রশ্নকারীরাই মূল্যায়ন করেন। পরে নম্বর যোগ করে ডিকোডিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচিতদের রোল নম্বর প্রকাশ করা হয়।
প্রশাসন এই ব্যবস্থাকে মেধা যাচাইয়ের একটি স্বচ্ছ ও আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে দাবি করলেও একাধিক শিক্ষক এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন
পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক লিখেছেন, “আমি এই লিখিত পরীক্ষার সঙ্গে একমত নই। এটি বিভাগের শিক্ষকদের ওপর অনাস্থা প্রকাশের শামিল। ভাইভা বা প্রেজেন্টেশনই যথেষ্ট ছিল। বিভাগীয় শিক্ষকদের উপস্থিতিতেই একটি প্রার্থীকে মূল্যায়ন করা যায়।”
গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশিদ আরও একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, “বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ হয় না। ৪৫ মিনিটের একটি সাধারণ পরীক্ষা কীভাবে কারও একাডেমিক মেধার চূড়ান্ত প্রমাণ হতে পারে? বরং একাডেমিক রেজাল্টে ৮০, লিখিত ১০ ও ভাইভাতে ১০ নম্বর রাখলে সেটাই হতো যৌক্তিক পদ্ধতি।”
তিনি আরো লিখেছেন, “আমি হলফ করে বলতে পারি, নামকরা অনেক শিক্ষককেও যদি এই পরীক্ষায় বসানো হয়, তারা পাশ করতে পারবেন না। কাজেই এই লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো কোনো ‘অশুভ উদ্দেশ্য’ বাস্তবায়িত হচ্ছে।”
অন্যদিকে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম প্রক্রিয়াটিকে “অতীতের তুলনায় উন্নত” বলে মত দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি রেজাল্ট, প্রবন্ধ, ভাইভা ও ডেমো ক্লাস মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার পক্ষপাতি। এতে ভালো প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ বাড়ে, যদিও এটি সময়সাপেক্ষ।”
তিনি আরো বলেন, “একেবারে নিখুঁত পদ্ধতি সম্ভব না হলেও বর্তমানে যা করা হচ্ছে, তা অতীতের চেয়ে ভালো। প্রশাসনের উচিত শিক্ষকদের মতামত বিবেচনায় রেখে প্রক্রিয়াটি পরিপূর্ণ করা।”
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে নতুন নিয়মে প্রথম নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে সমাজকর্ম বিভাগে। আগামীতে অন্যান্য বিভাগেও এ পদ্ধতিতে নিয়োগ চলবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


মোঃ শফিকুল ইসলাম (মাগুরা সদর)