রাজশাহীতে অ্যাম্বুলেন্স-ট্রাক সংঘর্ষ, ৩ জন নিহত

রাজশাহীতে অ্যাম্বুলেন্স-ট্রাক সংঘর্ষ, ৩ জন নিহত। ছবি মোহাইমিনুল ইসলাম
টমেটোবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে অ্যাম্বুলেন্সের সম্মুখভাগ পুরোপুরি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সামনে থেকে দেখে চেনার উপায় নেই যে এটি একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল।
এই দুর্ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সের রোগী সুন্দরী পাহান (৬৫), তাঁর মেয়ে আদুরী মুরালি ও অ্যাম্বুলেন্সচালক জাফর ইকবাল ঘটনাস্থলেই মারা যান।
সোমবার (৩ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়িহাট এলাকায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক, সুন্দরী পাহানের মেয়ে সুমি রানি, ছেলে অসীম মুরালি, নাতি সুদেব মুরালি, তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গোদাগাড়ী ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার মাহাবুবুর রহমান জানান, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি সঠিক লেনেই ছিল, কিন্তু ট্রাকটি বিপরীত লেনে ঢুকে সংঘর্ষ ঘটায়।
প্রত্যক্ষদর্শী কৃষক আবদুর রউফ জানান, ট্রাকটি বসন্তপুরের একটি কারখানায় টমেটো নিয়ে যাচ্ছিল। রাজাবাড়িহাট যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সামনে ভুল লেনে গিয়ে ট্রাকটি অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দেয়।
দুর্ঘটনার সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সুদেব মুরালির ভাইরা নিরাঞ্জন মুন্ডা বলেন, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, চালকও ঘুমাচ্ছিলেন কি না, তা তিনি জানেন না।
ট্রাকচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। চালকের সহকারীকে স্থানীয়রা আটক করলেও পরে তিনি জনতার হাত ফসকে পালিয়ে যান।
রোগীর সংকটজনক অবস্থা ও পরিবারের আর্তনাদ
সুন্দরী পাহানের জামাতা হীরালাল পাহান জানান, রাত ১২টার দিকে শাশুড়ির কথা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁকে গোদাগাড়ীর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।
দুর্ঘটনার পর সুমি রানিকে হাসপাতালের বারান্দায় রাখা হয়। তাঁর মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত। চিকিৎসকেরা তাঁর কপালে চাপ দিলে তিনি ব্যথায় চিৎকার করে বলেন, ‘ওরে বাবারে, ওরে বাবারে!’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সুমি রানির অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্ক্যানের প্রয়োজন হলেও হাসপাতালের সিটি স্ক্যান মেশিন সাময়িকভাবে কাজ করছে না, তাই তাঁকে অন্য কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিতে হবে।
সুন্দরী পাহানের ছেলে অসীম মুরালি ও নাতি সুদেব মুরালিকে ওয়ার্ডের মেঝেতে রাখা হয়েছে। শিশুসন্তান কোলে নিয়ে অসীমের স্ত্রী কিরণ মুরালি স্যালাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, আর সুদেবের স্ত্রী সুনীতি রানি স্বামীর পরিচর্যায় ব্যস্ত।
পুলিশের বক্তব্য
গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন জানান, নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে গোদাগাড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে। স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে, তাঁরা আসার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে।