বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের বড় মঞ্চে গান গাইলেন আজীবন অবহেলিত শিল্পী আরজ আলী

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চলছে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’। বুধবার এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন।
এই সম্মেলনে বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজন করা হয়। এতে গান পরিবেশন করেছেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার গুণী শিল্পী বাউল আরজ আলী।
আজীবন অবহেলিত এই শিল্পীর গানই জীবন। তিনি দুর্গাপুরের বিজয়পুর এলাকার সাদামাটির পাহাড়ে গান গেয়ে দেশব্যাপী ভাইরাল হয়েছেন। কিন্তু দু:খ ঘুচেনি তার। গান গেয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে তার দিন চলেনা। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় মঞ্চে গান পরিবেশন করবেন। অবশেষে জীবন সায়াহ্নে এসে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর বিশেষ সহযোগিতায় তিনি ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এর বড় মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তার গান মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন এই সম্মেলনে আসা দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ী,সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা,সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা বারবার করতালিতে অভিবাদন জানিয়েছেন শিল্পীকে। আরজ আলী তার চিরচেনা একতারা হাতে মঞ্চে নিজস্ব ঢঙে গান পরিবেশন করেন। শেকড়ের এই শিল্পীকে পেয়ে অতিথিরা বেশ অভিভূত হন। মঞ্চে যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষণই উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়েছেন।
এর আগে তাকে রাজকীয় সম্মান দিয়ে বিশেষ বাহনে করে মঞ্চে আনা হয়। এসময় সকলের মনযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যান আরজ আলী। চোখে কালো সানগ্লাস,পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও বিশেষ কোট,লুঙ্গি,পায়ে বিশেষ নাগড়া জুতো। যেন এক নতুন আরজ আলী। তাকে দেখে দর্শকের মনেই হলোনা তিনি এক অজপাড়াগাঁয়ের বাসিন্দা।
দেশের এতো বড় মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করায় শিল্পী আরজ আলী এখন প্রশংসায় ভাসছেন। চারদিক থেকে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রশংসা বাক্যে তাকে অভিবাদন জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার মঞ্চে আগমনের ভিডিও এখন ভাইরাল। তার পরিবেশনার ক্লিপও ছড়িয়েছে বেশ। তার নিজ উপজেলা দুর্গাপুরের সর্বত্র এই আলোচনাই হচ্ছে। তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে নেত্রকোণা জেলাজুড়ে। নানা শ্রেণীপেশার মানু্ষ বলছে,শেষ বয়সে এসে এমন বিরল সম্মান আরজ আলীর আজীবনের আক্ষেপ দূর করেছে। তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। এটি সকলের জন্যই অনেক আনন্দের। এজন্য সরকারের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। সেই সাথে গানকেই জীবনজ্ঞান করা আরজ আলী যেন ভালো থাকতে পারেন,তার অভাব যেন ঘুচে যায় সেই উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সকলে।