কবি লতিফুর রহমানের কবিতায় প্রতিবাদের ভাষা, সামাজিক অবক্ষয় ও মানবতার আর্তনাদ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে কবি লতিফুর রহমানের কবিতাগুলি সমাজের এক নির্মম চিত্র তুলে ধরেছে। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, বিচারহীনতা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের মতো কঠিন বাস্তবতা। ‘নিষ্ঠুর উপাখ্যান’, ‘নির্ঘুম রাত্রি’ এবং ‘নীরব কবিতা’ নামক তিনটি কবিতার মাধ্যমে তিনি বর্তমান সমাজের অস্থিরতা ও অসহায়তার কথা তুলে ধরেছেন।
নিষ্ঠুর উপাখ্যান
নিজেকে আজ বড়ই লাগে নিষ্ঠুর,
কাদের হাতে সঁপেছি এই রাজ্যপুর!
অপরাধীর বিচার না হয়, বোনদের হাহাকার,
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙা পথে, এ কেমন আঁধার!
চোখের সামনে দেখি স্ত্রীর লাঞ্ছনা,
ধর্ষিতার আর্তনাদে কাঁপে এ চেতনা।
কোথায় মা-বোনের নিরাপত্তা, কোথায় ভাইয়ের প্রাণ?
এ কোন দেশে বাস করি, এ কেমন অভিমান!
উপদেষ্টার ব্যর্থতায় দেশটা আজ দিশেহারা,
ন্যায়বিচারের বাণী, যেন আজ বড়ই খোঁড়া।
নিরাপত্তার অভাবে জীবন আজ বিপন্ন,
কোথায় শান্তি, কোথায় মনুষ্যত্বের বন্ধন?
ধিক্ আমাকে, ধিক্ আমার এই অক্ষমতা,
রক্ষক হয়েও আজ আমি নীরব শ্রোতা।
কবিতার ছন্দে আজ শুধু বেদনার সুর,
এই নিষ্ঠুর উপাখ্যানের নেই কোনো দূর।
নির্ঘুম রাত্রি
নির্ঘুম চোখে রাত্রি জাগে,
ধর্ষক সমাজের বিষাক্ত ছোবলে,
ঘুমেরাও পালিয়ে বাঁচে।
আসিয়ার কান্না, বোনেদের আর্তনাদ,
হৃদয়ে মাঝে ঝড় তোলে।
চোখের জলে ভাসে স্মৃতি,
কোমল প্রাণের হারিয়ে যাওয়া হাসি।
প্রতিবাদী কন্ঠেরা আজ ক্লান্ত,
তবুও থামে না দীর্ঘশ্বাস।
এই সমাজ, কবে হবে শুদ্ধ?
কবে থামবে এই পাশবিকতা?
কবে বোনেরা নির্ভয়ে হাসবে?
কবে এই রাত্রি হবে শান্তিময়?
কবে আমরা ঘুমাতে পারবো নিশ্চিন্তে?
প্রশ্ন জাগে মনে, উত্তরের আশায়,
নির্ঘুম রাত্রি কাটে অপেক্ষায়।
কবে হবে এই সমাজের পরিবর্তন?
কবে আমরা পাবো সত্যিকারের মুক্তি?
নীরব কবি”তা
কবিতারা আজ বন্দী, নিথর,
অমানবিকতার খাঁচায়।
কবিরাও আজ ভীত, স্তব্ধ,
কলমও যেন কাঁপে ভয়ে।
স্বাধীনতা কি তবে ফাঁকি ছিল?
পশুদের হাতে ছেড়ে দিয়ে?
ধর্ষকের উল্লাসে আজ দেশ কাঁদে,
কবিরা মুখ লুকায় ভয়ে।
কোথায় সে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর?
কোথায় সেই বজ্র নিনাদ?
কেন আজ কবিরা নীরব, স্তব্ধ?
কেন আজ এত বিষাদ?
স্বাধীনতার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার,
মানবতা আজ পরাধীন।
কবিদের কলম হোক হাতিয়ার,
জেগে উঠুক নতুন দিন।